বইটি সম্পর্কে কিছু কথা
‘দুনিয়াসক্তি’ রোগের একমাত্র ওষুধ হলো, যুহদ। এর সরল অর্থ হলো, দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি, দুনিয়াবিমুখতা। যুহদ হলো ইসলামি জীবনদর্শন। একজন মুসলিম যেভাবে দুনিয়া থেকে গা বাঁচিয়ে চলে, সেটাকেই যুহদ বলে। যেভাবে জীবনধারণ করেছিলেন প্রাণের নবি , তাঁর সাহাবি ও উম্মাতের শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের মানুষেরা। যেভাবে জীবন পরিচালনা করে মুসলিম জাতি অর্ধ পৃথিবীর কর্তা হয়েছিল সেই জীবনপদ্ধতিই হলো, যুহদ। আজকের ভোগবাদী ও বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থায় যুহদ হলো পরিত্যক্ত। স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে মুসলিমরাও আজ নির্যাতিত, নিষ্পেষিত ও অচ্ছুতজাতি। এ জাতি যতদিন না তাদের নেককার পূর্বসূরি তথা সালাফে-সালিহিনের জীবনপদ্ধতিকে পুনরায় আপন করে না নিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মুক্তি নেই। সেই মুক্তির পথের একটি ক্ষুদ্র নকশা এই বইটি। ‘যুহদ’ বিষয়ক বেশ কিছু কিতাবাদি প্রকাশিত হয়েছে। বইগুলোর বেশির ভাগই তাহকীককৃত নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে মুনকার, জাল হাদীসও উল্লেখ আছে কিছু কিছু বইতে, অথচ সেগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় আমরা ‘যুহদ’ ও ‘রিকাক’ বিষয়ক বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহ প্রয়োজনীয় সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ সংকলন করার ইচ্ছা করি। যা মৌলিক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন গ্রন্থ হবে। এই সংকলনটির বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে: ১. একাধিক প্রাচীন ও আধুনিক মুহাদ্দিসদের তাহকীকি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধতম হাদীসসমূহের সংকলন। ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাখ্যামূলক ও সহীহ হাদীসের অনুকূল দয়ীফ বর্ণনা আনা হলেও তার যথাযথ মানোল্লেখ রয়েছে। কিছু মাকতু বর্ণনা রয়েছে যেগুলোর ব্যাপারে মুহাক্কিকদের হুকুম পাওয়া যায়নি। ২. প্রাথমিকভাবে বইটি সংকলন করা হয়েছে প্রসিদ্ধ ছয় হাদীস গ্রন্থের ‘যুহদ’ অথবা ‘রিকাক’ অধ্যায়সমূহ থেকে। এরপর মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবাহ, সুনানুদ দারিমি, শুআবুল ঈমান, নাসায়ি সুনানুল কুবরা, মুসতাদরাক হাকিম ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থসমূহের ‘যুহদ’ ও ‘রিকাক’ বিষয়ক অধ্যায়সমূহ থেকে বর্ণনা সংগ্রহ ও সংকলন করা হয়েছে। প্রাচীন ইমামদের যুহদ ও রিকাক বিষয়ক একাধিক হাদীসগ্রন্থ সংকলন রয়েছে। ‘কিতাবুয যুহদ’ অথবা ‘কিতাবুয যুহদ ওয়ার রিকাক’ শিরোনামেই গ্রন্থ রয়েছে: ১. ইমাম ইবনুল মুবারাক (মৃত্যু: ১৮১হি.) ২. ইমাম মুআফি (মৃত্যু: ১৮৫হি.) ৩. ইমাম ওয়াকি (মৃত্যু: ১৯৭হি.) ৪. ইমাম আসাদ (মৃত্যু: ২১২হি.) ৫. ইমাম আহমাদ (মৃত্যু: ২৪১হি.) ৬. ইমাম হান্নাদ (মৃত্যু: ২৪৩হি.) ৭. ইমাম আবু হাতিম আল-রাযি (মৃত্যু: ২৭৭হি.) ৮. ইমাম ইবনু আবিদ্দুনইয়া (মৃত্যু: ২৮১হি.) ৯. ইমাম ইবনু আবি আসিম (মৃত্যু: ২৮৭হি.) ১০. ইমাম আবু দাউদ (মৃত্যু: ২৭৫হি.) ১১. ইমাম ইবনু আরাবি (মৃত্যু: ৩৪০হি.) ১২. ইমাম বাইহাকি (মৃত্যু: ৪৫৮হি.) ১৩. ইমাম খাতীব বাগদাদি (মৃত্যু: ৪৬৩হি.) ১৪. ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (মৃত্যু: ৭২৮হি.) সহ আরো ইমামদের। এসব গ্রন্থের নির্বাচিত বিশুদ্ধ বর্ণনাসমূহও গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। ৩. বইটিতে ঐসব বর্ণনাই প্রাধান্য দিয়ে সংকলন করা হয়েছে, যেগুলো সনদের দিক থেকে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও ভাষ্যের দিক থেকে সর্বাধিক পূর্নাঙ্গ। হাদীসের পুনরাবৃত্তি হয়নি। ৪. গুরুত্বপূর্ণ আয়াত ও হাদীসসমূহে সংক্ষিপ্ত তাফসীর ও ব্যাখ্যা/ফায়দা যোগ করা হয়েছে। যে সমস্ত মুহাদ্দিস ও মুহাক্কিকদের তাহকীক ও তাখরীজকৃত গ্রন্থ থেকে সংকলিত: ১. ইমাম বূসীরি ১০. শাইখ সা’দ ২. ইমাম ইরাকি ১১. শাইখ উসামা ৩. ইমাম হাইসামি ১২. শাইখ আবদুর রহমান ৪. ইমাম মুনযীরি ১৩. শাইখ মুখতার আহমাদ ৫. শাইখ আলবানি ১৪. শাইখ হামীদ ৬. শাইখ যুবাইর ১৫. শাইখ মাশহুর হাসান ৭. শাইখ আরনাঊত ১৬. শাইখ মাজদি ফাতহি সাইয়িদ ৮. শাইখ বাশশার আওয়াদ মারুফ ১৭. শাইখ আহমাদ ফারীদ ৯. শাইখ হুসাইন আদ-দারানি ১৮. শাইখ আবু ইসহাক আল-হুওয়াইনি প্রমুখ।